শিরোনাম: ঢাকার আশেপাশে একদিনে ঘুরে আসার মতো ১০টি মনোরম জায়গা
যানজট, কোলাহল আর কর্মব্যস্ততায় ভরা ঢাকা শহরের জীবন একঘেয়ে লাগাটা খুব স্বাভাবিক। এই চক্র থেকে সাময়িক মুক্তি পেতে মন চায় একটুখানি সবুজের ছোঁয়া, একটু ঐতিহাসিক আবহ কিংবা প্রকৃতির কাছাকাছি নিরিবিলি একটি দিন। কিন্তু লম্বা ছুটির জন্য অপেক্ষা করারও সুযোগ নেই।
চিন্তা নেই! ঢাকার আশেপাশে এমন অনেক সুন্দর জায়গা আছে, যেখানে আপনি মাত্র একদিনেই ঘুরে আসতে পারবেন। সকালের স্নিগ্ধতায় যাত্রা শুরু করে সারাদিন কাটিয়ে আবার রাতের মধ্যেই ফিরে আসতে পারবেন আপনার চেনা শহরে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এমনই ১০টি মনোরম জায়গা সম্পর্কে।
১. পানাম নগর ও সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ
কেন যাবেন: ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যেতে চাইলে সোনারগাঁও আপনার জন্য সেরা গন্তব্য। ঈশা খাঁর প্রাচীন রাজধানী আর তার পাশেই অবস্থিত ‘হারিয়ে যাওয়া নগরী’ পানাম সিটি আপনাকে শত শত বছর পেছনে নিয়ে যাবে। সরু রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে থাকা পুরোনো সব দালান আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
কীভাবে যাবেন: ঢাকার গুলিস্তান থেকে স্বদেশ, বোরাক বা দোয়েল পরিবহনের বাসে করে মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা নামতে হবে। ভাড়া পড়বে ৫০-৭০ টাকা। সেখান থেকে রিকশা বা অটোতে সহজেই যেতে পারবেন সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর এবং পানাম নগর।
বিশেষ আকর্ষণ: লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর, পানাম নগরের প্রাচীন স্থাপত্য, গোয়ালদী মসজিদ।
আনুমানিক খরচ: জনপ্রতি ৫০০-৮০০ টাকা।
২. গোলাপ গ্রাম, সাদুল্লাপুর
কেন যাবেন: চোখ যতদূর যায় শুধু গোলাপের বাগান দেখতে কেমন লাগবে? এমন দৃশ্য দেখতে চাইলে আপনাকে যেতে হবে সাভারের সাদুল্লাপুর গ্রামে, যা ‘গোলাপ গ্রাম’ নামে পরিচিত। বিশেষ করে শীতকালে গেলে গোলাপের মন মাতানো সৌরভ আর নয়নাভিরাম দৃশ্য আপনার সারাদিনের ক্লান্তি দূর করে দেবে।
কীভাবে যাবেন: ঢাকার মিরপুর-১, গাবতলী বা সাভার থেকে বাসে উঠে আকরাইন বাজার বা সাভার বাজার নামতে হবে। সেখান থেকে রিকশা বা অটোতে সাদুল্লাপুর। এছাড়া, মিরপুর দিয়াবাড়ি ঘাট থেকে সরাসরি সাদুল্লাপুরের উদ্দেশ্যে নৌকা ছাড়ে।
বিশেষ আকর্ষণ: গোলাপের বাগান, নৌকা ভ্রমণ, তাজা গোলাপ কেনার সুযোগ।
আনুমানিক খরচ: জনপ্রতি ৪০০-৬০০ টাকা।
৩. মৈনট ঘাট, দোহার
কেন যাবেন: পদ্মার উত্তাল ঢেউ আর দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি দেখতে কার না ভালো লাগে? মৈনট ঘাটকে ভালোবেসে অনেকেই "মিনি কক্সবাজার" বলে ডাকে। এখানে স্পিডবোট বা ট্রলারে করে পদ্মার বুকে ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা অসাধারণ।
কীভাবে যাবেন: ঢাকার গুলিস্তান থেকে সরাসরি মৈনট ঘাটের জন্য "যমুনা ডিলাক্স" বাস ছাড়ে। ভাড়া জনপ্রতি ৯০-১১০ টাকা। ফিরতেও একই বাসে পারবেন।
বিশেষ আকর্ষণ: পদ্মার তীরে হাঁটা, নৌকা বা স্পিডবোট ভ্রমণ, তাজা ইলিশ ভাজা খাওয়া।
আনুমানিক খরচ: জনপ্রতি ৭০০-১০০০ টাকা।
৪. বালিয়াটি জমিদার বাড়ি, মানিকগঞ্জ
কেন যাবেন: বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং সুন্দর জমিদার বাড়িগুলোর মধ্যে বালিয়াটি অন্যতম। এর বিশাল স্থাপত্যশৈলী, প্রশস্ত প্রাঙ্গণ এবং পুরোনো কারুকার্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। ইতিহাস ও স্থাপত্যপ্রেমীদের জন্য এটি একটি চমৎকার জায়গা।
কীভাবে যাবেন: ঢাকার গাবতলী থেকে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়াগামী বাসে উঠে বালিয়াটি নামতে হবে। ভাড়া প্রায় ১০০-১২০ টাকা। এছাড়া, আরিচাগামী যেকোনো বাসে উঠে সাটুরিয়া থেকেও যাওয়া যায়।
বিশেষ আকর্ষণ: প্রাসাদের অসাধারণ স্থাপত্য, জাদুঘর (বর্তমানে বন্ধ থাকতে পারে), বিশাল পুকুর ঘাট।
আনুমানিক খরচ: জনপ্রতি ৬০০-৯০০ টাকা।
৫. বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, গাজীপুর
কেন যাবেন: পরিবার ও বাচ্চাদের নিয়ে বন্যপ্রাণী দেখতে চাইলে এই সাফারি পার্কটি দারুণ একটি জায়গা। এখানে জীবজন্তুদের খোলা পরিবেশে विचरण করতে দেখা যায়, যা সাধারণ চিড়িয়াখানার চেয়ে অনেক বেশি আকর্ষণীয়।
কীভাবে যাবেন: ঢাকার মহাখালী থেকে ময়মনসিংহগামী যেকোনো বাসে (যেমন: সৌখিন, এনা) উঠে বাঘের বাজার নামতে হবে। ভাড়া ১০০-১৫০ টাকা। সেখান থেকে অটোতে সহজেই পার্কে যাওয়া যায়।
বিশেষ আকর্ষণ: কোর সাফারি পার্ক (যেখানে বাঘ, সিংহ, জিরাফ খোলা অবস্থায় থাকে), বার্ডস অ্যাভিয়ারি, প্রজাপতি কর্ণার।
আনুমানিক খরচ: জনপ্রতি ৭০০-১২০০ টাকা (প্যাকেজ টিকিটসহ)।
৬. জিন্দা পার্ক, নারায়ণগঞ্জ
কেন যাবেন: সম্পূর্ণ গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে গড়ে ওঠা এই পার্কটি সবুজে ঘেরা এক শান্তির জায়গা। বিশাল লেক, গাছপালা, লাইব্রেরি, মসজিদসহ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামীণ পরিবেশ এখানে পাওয়া যায়। নিরিবিলি পরিবেশে একটি দিন কাটাতে চাইলে জিন্দা পার্ক সেরা।
কীভাবে যাবেন: ঢাকার কুড়িল বিশ্বরোড থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত লেগুনা বা বাসে যেতে হবে। ভাড়া ৪০-৫০ টাকা। ব্রিজ পার হয়ে অটোতে করে পার্কে যাওয়া যায়।
বিশেষ আকর্ষণ: বিশাল লেকে নৌকা ভ্রমণ, সবুজে ঘেরা হাঁটার পথ, লাইব্রেরি, মাটির ঘর।
আনুমানিক খরচ: জনপ্রতি ৬০০-৮০০ টাকা (প্রবেশ ফি সহ)।
৭. আরিয়াল বিল, মুন্সিগঞ্জ
কেন যাবেন: বর্ষাকালে আরিয়াল বিলের রূপ দেখলে আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য। চারদিকে শুধু পানি আর পানি, তার মাঝে ছোট ছোট গ্রাম। নৌকায় করে বিলের মাঝ দিয়ে ঘুরে বেড়ানো এবং তাজা মাছ খাওয়ার অভিজ্ঞতা ভোলার মতো নয়।
কীভাবে যাবেন: ঢাকার গুলিস্তান বা পোস্তগোলা থেকে শ্রীনগর বা দোহারগামী বাসে উঠে গাদিঘাট নামতে হবে। সেখান থেকে নৌকায় বিল ভ্রমণ করা যায়।
বিশেষ আকর্ষণ: বর্ষায় নৌকা ভ্রমণ, সূর্যাস্ত দেখা, তাজা মাছের স্বাদ নেওয়া।
আনুমানিক খরচ: জনপ্রতি ৭০০-১০০০ টাকা।
৮. ওয়ারী-বটেশ্বর, নরসিংদী
কেন যাবেন: আপনি যদি প্রত্নতত্ত্ব ও প্রাচীন ইতিহাস ভালোবাসেন, তবে বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন ওয়ারী-বটেশ্বর আপনার জন্য অবশ্য দ্রষ্টব্য একটি স্থান। এখানে আড়াই হাজার বছরের পুরোনো দুর্গ-নগরীর ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।
কীভাবে যাবেন: ঢাকার মহাখালী বা গুলিস্তান থেকে ভৈরব বা নরসিংদীগামী বাসে উঠে মরজাল বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে। সেখান থেকে সিএনজি বা অটোতে বটেশ্বর যাওয়া যায়।
বিশেষ আকর্ষণ: প্রত্নতাত্ত্বিক খনন স্থান, অসম রাজার গড়, জাদুঘর।
আনুমানিক খরচ: জনপ্রতি ৬০০-৯০০ টাকা।
৯. ধামরাই কাঁসা ও মৃৎশিল্প গ্রাম
কেন যাবেন: বাংলার ঐতিহ্যবাহী কাঁসা ও মৃৎশিল্পের কারুকার্য দেখতে চাইলে ধামরাইয়ের এই গ্রামগুলো ঘুরে আসতে পারেন। শিল্পীদের নিপুণ হাতে তৈরি করা অসাধারণ সব জিনিসপত্র দেখা এবং কেনা দুটোই সম্ভব।
কীভাবে যাবেন: ঢাকার গাবতলী থেকে ধামরাইগামী বাসে উঠে ধামরাই বাজারে নামতে হবে। সেখান থেকে রিকশা নিয়ে কাঁসা ও মৃৎশিল্পের গ্রামগুলোতে যাওয়া যায়।
বিশেষ আকর্ষণ: কাঁসা-পিতলের কারুকার্য দেখা, মৃৎশিল্পীদের কাজ পর্যবেক্ষণ, ঐতিহ্যবাহী জিনিসপত্র কেনা।
আনুমানিক খরচ: জনপ্রতি ৫০০-৭০০ টাকা।
১০. জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস
কেন যাবেন: সবুজে ঘেরা এই সুন্দর ক্যাম্পাসটি যেকোনো প্রকৃতিপ্রেমীর জন্য দারুণ এক জায়গা।特に শীতকালে এখানকার লেকগুলোতে অতিথি পাখিদের মেলা বসে, যা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসে।
কীভাবে যাবেন: ঢাকার যেকোনো স্থান থেকে সরাসরি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে নামার বাস পাওয়া যায়।
বিশেষ আকর্ষণ: শীতকালে অতিথি পাখি, প্রজাপতি মেলা, মনোরম লেক, সবুজ চত্বর।
আনুমানিক খরচ: জনপ্রতি ৩০০-৫০০ টাকা।
ব্যস্ত জীবনে এক দিনের ছুটিও অনেক মূল্যবান। তাই দেরি না করে আপনার পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো একটি জায়গা বেছে নিন আর বেরিয়ে পড়ুন প্রকৃতির কাছাকাছি। আপনার ভ্রমণ আনন্দময় হোক!

0 Comments