Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

মাত্র ২০০০ টাকায় মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্রমণ! (শিক্ষার্থীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ গাইড)


শিরোনাম: মাত্র ২০০০ টাকায় মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্রমণ! (শিক্ষার্থীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ গাইড)

সাজেক ভ্যালি! নামটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে মেঘের চাদরে ঢাকা সবুজ পাহাড়ের সারি, নির্মল বাতাস আর দিগন্তজোড়া প্রকৃতির এক অসাধারণ রূপ। অনেকেই স্বপ্ন দেখেন এই মেঘের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়ার। কিন্তু খরচের কথা ভেবে পিছিয়ে যান? বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য ভ্রমণ মানেই বাজেট নিয়ে চিন্তা।

আজকের এই ব্লগে আমরা জানাবো কীভাবে একটি সঠিক পরিকল্পনা করলে আপনি এবং আপনার বন্ধুরা মাত্র ২০০০ টাকার মধ্যেই (খাগড়াছড়ি থেকে) সাজেক ভ্যালি ঘুরে আসতে পারবেন। চলুন, শুরু করা যাক মেঘের রাজ্যে কম খরচে হারিয়ে যাওয়ার মিশন!

সঠিক পরিকল্পনা: বাজেট ঠিক রাখার প্রথম শর্ত

সাজেকে কম খরচে ভ্রমণের মূলমন্ত্র হলো একটি ভালো দল গঠন করা এবং সবকিছু আগে থেকে পরিকল্পনা করে নেওয়া। একা ভ্রমণ করলে খরচ অনেক বেড়ে যাবে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনারা ১০-১২ জনের একটি দল তৈরি করে নিতে পারেন। এতে চাঁদের গাড়ি (জিপ) এবং কটেজ ভাড়ার খরচ সবার মধ্যে ভাগ হয়ে যাওয়ায় জনপ্রতি খরচ অনেক কমে আসবে।

ভ্রমণের সেরা সময়: ছুটির দিন বা উৎসবের মৌসুম (যেমন: ঈদ, পূজা) এড়িয়ে চলুন। কারণ এই সময়গুলোতে গাড়ি ভাড়া, হোটেল ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। অফ-সিজনে বা সপ্তাহের মাঝখানে গেলে খরচ অনেক কমাতে পারবেন।

বাজেট ব্রেকডাউন: ২০০০ টাকায় কী কী সম্ভব?

প্রথমেই বলে রাখা ভালো, ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে আসা-যাওয়ার বাস ভাড়া এই বাজেটের অন্তর্ভুক্ত নয়। আমরা এখানে খাগড়াছড়ি পৌঁছানোর পর থেকে সাজেক ভ্রমণ করে আবার খাগড়াছড়ি ফিরে আসা পর্যন্ত খরচের একটি পূর্ণাঙ্গ হিসাব তুলে ধরছি।

১. চাঁদের গাড়ি (জিপ) ভাড়া: খাগড়াছড়ি শহর থেকে সাজেক ভ্রমণের জন্য আপনাকে জিপ রিজার্ভ করতে হবে, যা স্থানীয়ভাবে "চাঁদের গাড়ি" নামে পরিচিত।

  • খরচ: একটি জিপ ২ দিন ১ রাতের জন্য রিজার্ভ করতে সাধারণত ৮,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা নেয় (অবশ্যই দামাদামি করতে হবে)। আমরা গড় ভাড়া ৯,০০০ টাকা ধরলাম।

  • জনপ্রতি খরচ (১২ জনের দলে): ৯০০০ ÷ ১২ জন = ৭৫০ টাকা।

২. থাকার ব্যবস্থা (কটেজ ভাড়া): সাজেকে থাকার জন্য অসংখ্য সুন্দর সুন্দর কটেজ রয়েছে। কম খরচে থাকতে চাইলে আপনাকে একটু সাধারণ মানের কটেজ বা আদিবাসীদের বাড়িতে থাকতে হবে।

  • খরচ: একটি রুমে ৪-৫ জন থাকার মতো সাধারণ মানের কটেজের ভাড়া পড়বে ১৫০০-২০০০ টাকা। আমরা ১৫০০ টাকা ধরলাম।

  • জনপ্রতি খরচ (৪ জন এক রুমে থাকলে): ১৫০০ ÷ ৪ জন = ৩৭৫ টাকা।

৩. খাবার খরচ: সাজেকে খাবারের খরচ তুলনামূলকভাবে একটু বেশি। তবে সাধারণ মানের হোটেলগুলোতে প্যাকেজ সিস্টেমে খেলে খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

  • খরচ (জনপ্রতি):

    • ১ম দিন দুপুর ও রাতের খাবার: (১৫০ + ১৫০) = ৩০০ টাকা

    • ২য় দিন সকাল ও দুপুরের খাবার: (১০০ + ১৫০) = ২৫০ টাকা

  • মোট খাবার খরচ: लगभग ৫৫০ টাকা।

৪. অন্যান্য খরচ: সাজেকে প্রবেশ ফি এবং অন্যান্য ছোটখাটো কিছু খরচ রয়েছে।

  • সাজেক প্রবেশ ফি: ২০ টাকা

  • অন্যান্য (যেমন: কংলাক পাড়া যাওয়া): ৩০ টাকা

  • মোট: ৫০ টাকা।


সর্বমোট জনপ্রতি খরচ (খাগড়াছড়ি থেকে): ৭৫০ (গাড়ি) + ৩৭৫ (কটেজ) + ৫৫০ (খাবার) + ৫০ (অন্যান্য) = ১,৭২৫ টাকা।

দেখতেই পাচ্ছেন, সঠিক পরিকল্পনা করলে খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক ঘুরে আসার খরচ জনপ্রতি অনায়াসে ২০০০ টাকার নিচে রাখা সম্ভব। হাতে কিছু টাকা বাড়তি রাখলে আপনার ভ্রমণ আরও স্বাচ্ছন্দ্যের হবে।

ঢাকা/চট্টগ্রাম থেকে কীভাবে যাবেন?

ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি যাওয়ার জন্য অনেক বাস সার্ভিস রয়েছে। নন-এসি বাসের ভাড়া সাধারণত কম।

  • বাস ভাড়া: ঢাকা থেকে শান্তি, শ্যামলী, ঈগল ইত্যাদি পরিবহনের নন-এসি বাসের ভাড়া জনপ্রতি ৬০০-৭০০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে ভাড়া কিছুটা কম।

  • যাওয়া-আসা মোট বাস ভাড়া: (৬৫০ + ৬৫০) = ১৩০০ টাকা (প্রায়)।

ভ্রমণের একটি পূর্ণাঙ্গ রুটিন (২ দিন, ১ রাত)

দিন ০: যাত্রা শুরু

  • রাত ৯-১০টার বাসে ঢাকার আরামবাগ, ফকিরাপুল বা গাবতলী থেকে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিন। সারা রাত বাসেই কাটবে।

দিন ১: মেঘের রাজ্যে প্রবেশ

  • ভোর ৬-৭টার মধ্যে খাগড়াছড়ি শহরে পৌঁছানো।

  • শহরের কোনো একটি হোটেলে (যেমন: শাপলা চত্বরের কাছে) সকালের নাস্তা সেরে নিন (খরচ: ৮০-১০০ টাকা)।

  • আগে থেকে ঠিক করে রাখা চাঁদের গাড়ির ড্রাইভারের সাথে যোগাযোগ করে সকাল ৮টার মধ্যে সাজেকের উদ্দেশ্যে রওনা দিন।

  • গুরুত্বপূর্ণ: আর্মি এসকর্টের সময় অনুযায়ী (সকাল ১০টা ও বিকাল ৩টা) আপনাকে যেতে হবে, তাই সময়মতো রওনা দেওয়া জরুরি।

  • দুপুর ১২-১টার মধ্যে মেঘের রাজ্য সাজেকে পৌঁছানো এবং কটেজে চেক-ইন।

  • দুপুরের খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন।

  • বিকেলে চলে যান সাজেকের হ্যালিপ্যাডে। সূর্যাস্ত এবং মেঘের অসাধারণ খেলা দেখার সেরা জায়গা এটি।

  • সন্ধ্যায় কটেজে ফিরে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিন। রাতে সাধারণ কোনো হোটেলে রাতের খাবার সেরে নিন।

দিন ২: সূর্যোদয় এবং ফেরা

  • খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে চলে যান কংলাক পাড়ায়। এটি সাজেকের সর্বোচ্চ চূড়া। এখান থেকে সূর্যোদয় দেখার দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করবে।

  • সকালের নাস্তা সেরে নিন।

  • সকাল ৯-১০টার মধ্যে কটেজ থেকে চেক-আউট করে খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিন।

  • ফেরার পথে হাজাছড়া ঝর্ণা দেখে নিতে পারেন (সময় ও সুযোগ থাকলে)।

  • দুপুর ২-৩টার মধ্যে খাগড়াছড়ি শহরে ফিরে দুপুরের খাবার খেয়ে নিন।

  • শহরের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান, যেমন - আলুটিলা গুহা বা ঝুলন্ত ব্রিজ ঘুরে দেখতে পারেন (বাজেট ও সময় থাকলে)।

  • রাত ৮-৯টার বাসে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিন।

কিছু জরুরি টিপস

  • দামাদামি: চাঁদের গাড়ি, হোটেল বা খাবার হোটেলে দামাদামি করার সুযোগ থাকলে অবশ্যই করবেন।

  • শুষ্ক খাবার: সাথে কিছু শুকনা খাবার (বিস্কুট, চিপস, চানাচুর) রাখতে পারেন। এতে ছোটখাটো ক্ষুধা মেটানো সহজ হবে এবং খরচ বাঁচবে।

  • পাওয়ার ব্যাংক: সাজেকে বিদ্যুৎ সব সময় থাকে না, তাই মোবাইল চার্জ দেওয়ার জন্য পাওয়ার ব্যাংক অপরিহার্য।

  • রবি/এয়ারটেল সিম: সাজেকে অন্য কোনো মোবাইল নেটওয়ার্ক ভালোভাবে কাজ করে না। তাই রবি বা এয়ারটেল সিম সাথে রাখা ভালো।

  • পরিচয়পত্র: নিরাপত্তার জন্য নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্টুডেন্ট আইডির ফটোকপি সাথে রাখুন।

সঠিক পরিকল্পনা এবং দলবদ্ধ প্রচেষ্টা থাকলে অল্প খরচেই সাজেকের মতো সুন্দর জায়গা ভ্রমণ করা সম্ভব। তাই আর দেরি না করে বন্ধুদের সাথে প্ল্যান করে ফেলুন আর হারিয়ে আসুন মেঘের রাজ্যে। আপনার ভ্রমণ আনন্দময় হোক!

Post a Comment

0 Comments